২০০৩ সালে দিল্লি থেকে প্রকাশিত কাব্যসংকলন "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা"-র মলয় রায়চৌধুরী লিখিত ভূমিকা :


 পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা

যে কালখন্ডে, সবচেয়ে অশিক্ষিত সম্প্রদায় বলতে শিক্ষকদের বোঝায়, একটি বইয়ের নাম "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা" হলে, যেহেতু নামটিই গ্রন্থটির প্রবেশবিন্দু, নামকরণ নিয়ে কয়েকটি কথা বলে ফেলতে হচ্ছে। 'পোস্টমডার্ন' শব্দ ও ভাবকল্পটির উদ্ভাবক হলেন নিকারাগুয়ার কবি ফেদেরিকো দ্য ওনিস। যাঁরা ভাবকল্পটিতে দেরিদা, ফুকো, লাঁকা, লিওতার খুঁজে বেড়ান, এই বইটি তাঁদের না পড়াই কাজের কাজ হবে। ফেদেরিকো দ্য ওনিস "পোস্টমডার্ন" শব্দটি ১৯৩৪ সনে সম্পাদিত "আনতোলোজিয়া দ্য লা পোয়েজিয়া এসপানোলা এ হিসপানোমারিকানা" গ্রন্থে প্রয়োগ করেছিলেন কয়েকটি কারণে। ওই কারণগুলোর জন্যেই তিনি "পোস্টমডার্ন" শব্দটি উদ্ভাবন করতে বাধ্য হন।

গিল গনহালেস দ্য আভিলা ১৫২২ খৃষ্টাব্দে নিকারাগুয়াকে স্পেন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করার পর সেখানে ইউরোপের লোকেরা ভাগ্য ফেরাবার ধান্দায় লাগাতার আসা-যাওয়া আরম্ভ করেন। আফ্রিকা থেকে জাহাজভর্তি ক্রীতদাস আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে কেনা-বেচার সময়ে তাঁদের একাংশ নিকারাগুয়ার জনজীবনে প্রবেশ করেন। দক্ষিণ ভারতীয় দ্বীপগুলোয় যে সমস্ত ভারতীয় কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁদের অনেকে পৌঁছে ছিলেন নিকারাগুয়ায়। রেড ইন্ডিয়ানরা সেদেশে আগে থাকতেই ছিলেন। ১৮৩৪ সনে নিকারাগুয়া স্বাধীন হয় বটে কিন্তু ১৯১২ সন থেকে মার্কিন মিলিটারি সেখানে ঘাঁটি গাড়ে। প্রতিবাদে আগুস্তো সেজার সানদিনোর নেতৃত্বে গেরিলা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যে বছর সানদিনো আততায়ীর হাতে খুন হন সে বছরেই প্রকাশিত হল ফেদেরিকো দ্য ওনিসের সংকলন।

মার্কিনীরা নিকারাগুয়া থেকে পাত্তারি গুটোবার সময় জেনারাল আনাসতাসিও সোমোজা নামে এক খলনায়ককে নিকারাগুয়ার তখতে বসিয়ে গেলে সোমোজা পরিবার সে দেশের অর্থনীতিকে বরবাদ করে বিশ শতকের শেষ কয় বছরের পশ্চিমবাংলার মতন কাঙাল করে দিয়েছিল। মার্কিন সৈন্যরা ঘাঁটি গুটিয়ে ফেলেছিল ১৯৩৩ সনে। তবে, ১৯৩৬ সনে জেনারাল সোমোজাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্থায়ী তখতে বসানোর কাজে সাহায্যের জন্যে বেশ-কিছু মার্কিন সরকারী বুদ্ধিজীবীরা থেকে গিয়েছিল নিকারাগুয়ায়, যারা আমেরিকায় ফেরার সময়ে 'পোস্টমডার্ন' শব্দটা নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। সোমোজা পরিবারের অত্যাচারের দরুণ নিকারাগুয়ার বহু স্প্যানিশভাষী কবি-লেখকরা ব্রাজিলে পালিয়ে যান, যেখানে তাঁদের নামকরণ হয় লুসিও-ব্রাজিলিয়া। ব্রাজিল একটি পর্তুগীজভাষী দেশ। নিকারাগুয়া থেকে স্পেনে এবং ব্রাজিল থেকে পর্তুগালে নতুন ধারণাটি পৌঁছোলেও ইউরোপে সে সময়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি ভাবকল্পটিকে, কেননা সাম্রাজ্যবাদ যে নবতর চেহারায় তখন রূপান্তরিত হচ্ছিল সে কাঠামোয় স্পেন আর পর্তুগাল গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে কিন্তু প্রসার ঘটছিল ভাবকল্পটির এবং ১৯৪২ সনে ডাডলি ফিটস এই নতুন ধারণার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন "অ্যানথলজি অব কনটেমপোরারি ল্যাটিন অ্যামেরিকান পোয়েট্রি" সংকলনগ্রন্থের ভূমিকায়।

ফেদেরিকো দ্য ওনিস তাঁর চোখের সামনেই দেখেছিলেন এমন এক স্প্যানিশভাষী জনসমুদায় যাদের সংস্কৃতি, ভাষা, আচার-আচরণ, সংসারযাত্রা, ভাবনাচিন্তা ইত্যাদির সঙ্গে মূল স্পেন ভূখন্ডের আর যোগাযোগ নেই। যাদের অতীত এবং রক্তে মিশ্রণ ঘটেছে মূলবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে বহিরাগত অন্যান্য দেশের মানুষের। তিনি লক্ষ্য করলেন যে নিকারাগুয়া ও অন্যান্য লাতিন আমেরিকান কবিতার শব্দবিন্যাস ও অবয়বে প্রভূত প্রভাব ফেলেছে স্থানিকতা; বিশেষ করে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তির পর সেখানকার সাহিত্যে এসেছে উত্তরঔপনিবেশিক অনন্যতা; কবি-লেখকরা ইউরোপের সাহিত্য থেকে আলাদা হতে চাইছেন; ইউরোপে তখন যাকে মডার্ন সাহিত্য বলা হচ্ছে তাকে বর্জন করতে চাইছেন। স্থানীয় কবিতার পরিবর্তিত আদলটিকে তিনি 'পোস্টমডার্ন' নামে চিহ্নিত করলেন। সেসময়ে লিওতার, ফুকো, দেরিদারা সব মায়ের কোলে। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা" গ্রন্থের পাঠবস্তুগুলো, অতএব, ফেদেরিকো দ্য ওনিসের মস্তিষ্ক খাটিয়ে পরখ করতে হবে।

'ব্রূহাহা' শব্দটি মূলত হিব্রু। হিব্রু থেকে তা প্রবেশ করে ফরাসি ভাষায়, তারপর তা থেকে ইংরেজিতে এবং এখন ইংরেজি থেকে বাংলায়। শব্দটিতে আছে ইহুদিদের ভ্রাম্যমান সত্তা। যে সময়ে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল তখন তাঁরা নিজের অস্তিত্বকে নিজেদের দেশ মনে করতেন। যেন তাঁর দেহটিই তাঁর ভূখন্ড, তাঁর স্বদেশ। ইহুদিদের, সেমিটিক অতীতের বা ওল্ড টেস্টামেন্টের কারণে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরও, আনন্দোৎসবের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। শোকদিবস ও কৃচ্ছ্রসাধনের পরব বেশি। ভিন্ন দেশে, ভিন্ন সমাজে, ভিন্ন সংস্কৃতিতে শোকাবহ দিনগুলোর চাপ থেকে বেরোবার জন্যে তাঁরা প্রয়োজন বোধ করেছেন কার্যকারণহীন ও ব্যাখ্যাতীত আনন্দোৎসবের, হল্লা, হৈ-চৈ, মৌজমস্তির। এই ব্যাপারটিকেই তাঁরা বলতেন 'ব্রূহাহা'।

"পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা" গ্রন্থের চারজন লেখকই থাকেন দিল্লিতে, সেই যেখানে পৃথ্বীরাজ চৌহান রাজত্ব করতেন, কুতুবুদ্দিন আয়বক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্রীতদাসের রাজত্ব, গিয়াসুদ্দিন তুঘলক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খামখেয়ালির রাজবংশ, বাবর সূত্রপাত করেছিলেন মোগল সাম্রাজ্য, শাহেনশাহ আওরঙজেব নিজের টুপি নিজে সেলাই করতেন, সেই যেখানে ইংল্যান্ডের রানী ভারত সম্রাজ্ঞীর খেতাব পেয়েছিলেন, যেখানে বসে বাংলা ভাগের হুকুমনামা জারি করে কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ইন্ডিয়ার রাজধানী, যেখানে দেশভাগের আগে লুকোচুরি খেলতেন এডউইনা আর জবাহিরলাল, যেখানের পথে ঘাটে শিখ সম্প্রদায়ের তিন হাজার পুরুষ-নারী-শিশুকে জবাই করার নাদিরশাহী উৎসব পালিত হয়েছিল, যেখানে নিজের স্ত্রীকে খুন করে তন্দুরে পুড়িয়েছিলেন দেশসেবক, যেখানে কোটি কোটি টাকা সুটকেসে আবদ্ধ হয়ে পৌঁছে যায় মন্ত্রী আর আমলাদের বাড়িতে, যেখানে সোনার বাংলা থেকে ঝি-গিরি করতে বেরিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার বাঙালি মেয়েরা টিকে থাকেন যমুনাতীরের ঝুগগি ঝুপড়িতে। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারী চারজন সপ্তাহান্তে যেখানে একত্রিত হন, হয়ত সেখানেই পাশাখেলায় হেরে গিয়েছিলেন যুধিষ্ঠির, আর বস্ত্র-হরণ হয়েছিল দ্রৌপদীর। স্বদেশী বা বিদেশী সবাই এই শহরেই যে কেন 'পোস্ট' বা স্তম্ভ -- বিজয়স্তম্ভ -- পুঁততে চেয়েছেন, তার ব্যাখ্যা নেই। এই শহরের শীত ও গ্রীষ্ম অসহ্য। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের কাঁধের ওপর অতীতের হেস্তনেস্তকারী ঘটনাবলীর চাপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পর্যটক হয়ে তাঁরা যাননি শহরটিতে। তাঁরা প্রত্যেকেই এক-একজন বঙ্গভূখন্ড। তাঁদের শরীর তাঁদের বঙ্গদেশ।

শহরটিতে আরো বহু বাংলাভাষার লেখক আছেন, যাঁদের সঙ্গে "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারীদের মিল প্রায় নেই বললেই চলে। তা এই জন্যে নয় যে সেসব লেখকরা রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার বা সরকার মশায়দের রোমশ ড্যাংলার ধরে দোল খাওয়ায় আত্মনিয়োজিত। অথবা এই জন্যেও নয় যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের লাথরা খাবার ফলে কলকাতা ছাড়া তাঁরা চোখে ভাট ফুল দেখেন। তা এই জন্যে যে স্থানিকতার যে সূক্ষ্ম বোধ "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারীদের রয়েছে, তা তাঁদের নেই। মডার্ন পাঠবস্তুগুলোয়, ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদের প্রকোপে কালকে দেওয়া হয়েছিল নির্ণয়ক্ষমতা, এবং তাত্ত্বিক সমতলে স্থানকে পরিবর্তিত করা হয়েছিল কালে। ইউরোপের বহু লেখক ও শিল্পী উপনিবেশ থেকে ফর্ম ও কনটেন্ট নিয়ে গিয়ে নিজেদের কাজে আত্মসাৎ করেছিলেন এবং কালজয়ী হবার তকমা পেয়েছিলেন। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারী চারজন হিন্দুই জানেন যে কালজয় ব্যাপারটা ভাঁওতা। ফেদেরিকো দ্য ওনিস বলেছিলেন, সাম্রাজ্যবাদের প্রকোপে উপনিবেশের মানুষের এমন স্মৃতিবিপর্যয় ঘটে গেছে যে সেখানকার সাহিত্যে কালের তুলনায় স্থান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা কালের ধারণা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যকে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে হবে ইউরোপের মডার্ন সাহিত্যিকতা থেকে। ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার ফলেই লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সংবাদ প্রতিবেদনে বিপুল পরিবর্তন ঘটে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। পশ্চিমবঙ্গের মডার্নপন্থী আলোচকরা, যাঁরা অধিকাংশই ভালগার উদ্বাস্তুবাদী, তাঁরা স্থানকে গুরুত্ব দিতে পারছেন না বলে "পোস্টমডার্ন" ভাবনাটিকে বুঝে উঠতে পারছেন না। ফলে লিওতার, দেরিদা, ফুকো, লাকাঁয় পাক খেয়ে মরছেন।

"পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলোকে টের পেতে হলে শুনতে হবে এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার ভাবুকদের কথাবার্তা, যাঁরা ফেদেরিকো দ্য ওনিসের ভাবকল্পে আরও সূত্র যুগিয়েছেন। যেমন মিশরের ইহাব হাসান, প্যালেস্টাইনের এডোয়ার্ড সাইদ, ভারতের হোমি ভাবা, লাতিন আমেরিকার হোর্হে লুই বোর্হেস, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, আফ্রিকার নগুগি ওয়া থিয়ং'ও, চিনুয়া আচেবে, ফ্রাঁস ফ্যানঁ, আমা আটা আইডু, এলেচি আমাদি, আই ক্কোই আর্মাহ, মারিয়াম্মা বা শ্রীলঙ্কার মাইকেল ওনদাতজে, দক্ষিণ ভারতীয় দ্বীপপূঞ্জের ডেরেক ওয়ালকট, লুইজি বেনেট, এডোয়ার্ড কামাউ ব্র্যাথওইটে, বাংলাদেশের এজাজ ইউসুফি এবং পশ্চিমবাংলার সমীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এনারা সকলেই যে কথাটিতে জোর দিয়েছেন তা হল : "নিজের সমাজের, দেশের, সংস্কৃতির, মানুষের দিকে খুঁটিয়ে দেখুন আর তার মাঝে নিজেকে বসিয়ে খতিয়ে দেখুন।"

যে ব্যাপারটি এনাদের নাড়া দিল, তা হলো ব্যাপক ও অনপনেয় সংকরায়ন। ভাষাকাঠামোয়, বাক্যসংগঠনে, শব্দে, শব্দার্থে তো বটেই। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুতে এই সংকরায়ন আপনা থেকে ঘটেছে। এসেছে ইন্ডিয়ান ইংলিশ, হিন্দি, উর্দু, হরিয়ানভি, পাঞ্জাবি, তামিল অভিব্যক্তি-বিন্যাস। কেন না তাঁরা সবাই রয়েছেন ভারতবর্ষের সংকরায়নের টোর্নাডোর কেন্দ্রে। পশ্চিমবাংলার বহু পিচুটি অধ্যাপকের অভিযোগ যে অন্যান্য ভাষা থেকে অভিব্যক্তি আসছে বলে বাঙালিকে সাবধান হতে হবে যাতে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা অক্ষুণ্ন থাকে। তাঁদের দুটো-কথা বলা দরকার। প্রথমত, তাঁরা কি জানেন যে, যে কয়েক লক্ষ নিম্নবর্গের বাঙালিকে দেশভাগের পর আন্দামান, দন্ডকারণ্য এবং হিমালয়ের তিনশো কিলোমিটার দীর্ঘ তরাই অঞ্চলে পুনর্বাসন দেয়া হয়েছিল তাঁদের বাংলা এখান কি রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাঁরাও তো বাঙালি। নাকি বাঙালি বলতে কেবল পশ্চিমবাংলার ভালগার উদ্বাস্তুবাদী ভাড়াটেদের বোঝায়। দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষা তো নিজেই পূর্বী অপভ্রংশ থেকে উদ্গত। সংস্কৃত থেকে জন্ম অথচ শিষ্ট সংস্কৃতে অচল অভিব্যক্তিকে পতঞ্জলি বলেছিলেন অপভ্রংশ। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অংশগ্রহণকারীরা সংকরায়নকে একইভাবে ডিসকোর্সের আধিপত্য খর্ব করার কাজে প্রয়োগ করেছেন। অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের ভাষা-আধিপত্যকে নষ্ট করেই তো সম্ভব হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আমেরিকা, কানাডা, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়ার ইংরেজি সাহিত্য।

"পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" সংকরতা একটি সাস্কৃতিক প্রতর্ক, যে প্রতর্কটি অনেকানেক বৈশিষ্ট্যের উৎসকেন্দ্র। অংশগ্রহণকারীদের পেশা ও অভিজ্ঞতায় দুস্তর বৈভিন্ন্য। রবীন্দ্র গুহ টিভি-মিডিয়া কোম্পানীর কর্তা, অরূপ চৌধুরী আছেন সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে, দীপঙ্কর শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞ আর গৌতম দাশগুপ্ত ইলেকশন কমিশনে। দিল্লির নোংরামিতে অন্তর্নিহিত আতঙ্কের কে কতটা নিকটবর্তী, তদ্বারা তাঁর পাঠবস্তুগুলোর কন্ঠস্বরের বহুমুখ এবং তাদের অভিমুখগুলোর স্বেচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত পরিধিবিন্যাস ঘটেছে। সংকরায়নের মাধ্যমে ভাষায় যখনি আধিপত্যকে বিধ্বস্ত করা হয়, তার একটি সামাজিক মাত্রা অবশ্যই থাকে। সমাজের, বলা বাহুল্য ভাষারও, মানে বা অর্থময়তার ওপর কায়েমী স্বার্থে আঘাত হানে। এই কারণে কলকাতার মিডিয়া ক্লোনদের স্ট্রিমলাইনড কবিতা থেকে একেবারে আলাদা "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলো। নিষাদ হেমব্রম তাঁর "বর্ণসংকর, দোআঁসলা, হাইব্রিড (২০০০)" রচনায় বলেছেন যে, "বাঙালির সাম্রাজ্যবাদ এত বেশি আধিপত্যবাদী যে সাঁওতাল, মুন্ডা, হো, ওঁরাও, প্রমুখ উপজাতিদের পাশাপাশি বাস করলেও শেষোক্তদের শব্দাবলী বাংলা ভাষায় ঢুকতে পারেনি।"

পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ক্লোনদের কাজগুলো এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্গত। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলো কাউকে এন্টারটেইন করতে পারবে না। "ব্রূহাহাটির" পাঠবস্তুগুলো নিজস্ব পাঠকের জন্য তৈরি "ফিলগুড প্রডাক্ট" নয়। তারা ভোগবাদীর সেবায় নিয়োজিত মার্কেটেবল আইটেম নয়। বাস্তববাদের রংগিলা পোঁচ না দিলে বাঙালি ক্রেতার কাছে কোনো পাঠবস্তু গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলোয় মাইমেসিসের বাস্তববাদ পরিত্যক্ত। কেননা বাস্তবকে জানতে পারা যায় না। বাস্তববাদীরা, "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা" পরোক্ষে বলতে চাইছে, প্রকৃতপক্ষে ভ্রমবাদী। ভ্রমবাদী কবিতা, যা বাংলা মিডিয়া ক্লোনরা লিখে থাকেন, তা আদপে অবিশ্বাসকে দাবিয়ে রাখার প্রয়াস। ভ্রমবাদীরা সে কারণে ভালোলাগার নিটোল চিত্রকল্প গড়েন। লক্ষ্যণীয় যে "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলো মেনে নিয়েছে যে জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রের দ্রুতির কারণে নিটোল চিত্রকল্প গড়ে তোলা কাজহীন ক্ষেতমজুরের পক্ষেও আজকের দিনে অসম্ভব। "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহা" সেকারণে ভাষার উৎসব। অভিধা ও অভিব্যক্তির ব্যাখ্যাহীন আনন্দোৎসব। "ম্যাক্সিম্যালিজম ও মিনিম্যালিজমের" সংকরতার মিলনোৎসব। এই পরিস্থিতিতে পাঠবস্তুরা জঁড়হীন (Generless), সাহিত্য শাসকের বানানো অনুশাসন থেকে মুক্ত (Canonless) হয়ে যায়। চারজনই তাঁদের পাঠবস্তুকে ডিন্যারেটিভাইজ করার প্রয়াস করেছেন, যার ফলে সেগুলো অপরিচিতির আদল পায়। পরিচয় করার চ্যালেঞ্জ পাঠকের দিকে ছুঁড়ে দেয় পাঠবস্তুগুলো। জঁড়ের চৌহদ্দি ভেঙে এবং শৈলীর মিশ্রণ ঘটিয়ে পাঠবস্তুগুলো ভেঙে ফেলছে সাহিত্যের বাস্তববাদী ভ্রম। পরিত্যাগ করছে হায়ারারকি এবং ভাষাশৃঙ্খলার জেলগারদ। কোনো ফ্রেমে আটক করা সম্ভব নয় তাদের, যে কারণে তারা আরম্ভ ও সমাপনে অবরুদ্ধ নয়। বাংলা কবিতায় প্রথম ডিন্যারেটিভাইজেশান দেখা গেছে শম্ভু রক্ষিতের পাঠবস্তুতে।

সময়ের একরোখ আরম্ভ ও সমাপনের ধারণাটি ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে এসেছিল উপনিবেশগুলোয়। কবিতায় দশক বিভাজনের মূর্খামি উদ্গত হয়েছে সময় সম্পর্কে আরম্ভ ও সমাপনের মডার্নিস্ট ধারণা থেকে, যেন প্রতিটি দশকের শেষে বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী। চারজনই দিল্লিতে থাকেন বলে ভালভাবেই জানেন যে কোথাও কোনো বিপ্লব ১৯৪৭ এর পর হয়নি। বরং যারা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়েছিল তারা নিজেদের খাঁটি জোচ্চোর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি মিডিয়া ক্লোনরা গড়ে উঠেছে ভাষা-জোচ্চোর রূপে, কেননা পশ্চিমবঙ্গের পথেঘাটে, ভালগার উদ্বাস্তুবাদের দাপটে যে অভিব্যক্তি-মশলা প্রতিদিন শোনা যায়, তার দেখা মেলে না মিডিয়া ক্লোনদের রচনায়, অথচ সেই কোনকালে সমসাময়িক পথচলতি অভিব্যক্তিকে নিজের লেখায় তুলে আনার খেই ধরিয়ে দিয়ে গেছেন জীবনানন্দ। তাঁর কবিতায় তাই আচমকা 'ব্রূহাহা', পাঠকের টনক নড়ায়। এমনকি তাঁর যে পাঠবস্তুর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে পোস্টমডার্ন কবিতার সূত্রপাত হয়েছিল, সেই "প্যারাডিম" কবিতাটি অশেষ 'ব্রূহাহাময়'। কিন্তু "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অন্তর্ভূক্ত পাঠবস্তুর যে চার প্রকার যাযাবরত্ব, তাদের জীবনানন্দীয় মিল ব্যাস ওইটুকুই। দিল্লিতে টিকতে না পেরে ফেরত চলে গিয়েছিলেন জীবনানন্দ।

জীবনানন্দের কাছে বাস্তব ছিল ভঙ্গুর এবং সেকারণে তিনি তাঁর পাঠবস্তুকে একটি সামগ্রিক আসঞ্জনের ঘেরাটোপে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলোয়, রচনাকারদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে, অমন ঘেরাটোপ নেই। আসঞ্জনের হায়ারারকি তাঁরা ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন, সম্ভবত এই ভেবে যে, প্রণালীবদ্ধতায় ঘাপটি মেরে থাকে অমঙ্গল, কুনজর, কুচুটেপনা, জোচ্চুরি। কিন্তু কেন তাঁরা তা করছেন এর উত্তর আমি খুঁজে পেলুম ৭.৪.২০০২ তারিখে আমায় লেখা চিঠিতে শঙ্করনাথ চক্রবর্তীর এই কথাগুলোয় : "যে লাভটা হয় তা হল, নানা পরস্পরবিরোধী মেধা-অভিজ্ঞতাকে জারিত করার একটা ক্ষমতা জন্মায়, কোনো-একটা মত ও পথ নিয়ে স্থির বসে জাবর কাটার জরদ্গব বিরক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।" শঙ্করনাথ আমার "এই অধম ওই অধম" গ্রন্থটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া সূত্রে কথাগুলি বলেছিলেন।

"পোস্টমডার্ন ব্রূহাহার" পাঠবস্তুগুলোয় উত্তরঔপনিবেশিক ভারতীয়সমাজ উদ্ভূত প্রায় তাবৎ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যা বাংলা, তামিল, মারাঠি ও হিন্দি পোস্টমডার্ন পাঠবস্তুতে পাওয়া যাবে। ভারতবর্ষের প্রতিটি সাহিত্যভাষায় পোস্টমডার্ন লেখালিখি চলছে ও সর্বত্র চলছে আধিপত্যকামীদের সঙ্গে ঠোকাঠুকি, বিশেষ করে যাঁরা ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোয় মৌরসিপাট্টা জমিয়েছেন তাঁদের ও তাঁদের চামচাশ্রীদের সঙ্গে। পশ্চিমবাংলায় প্রকাশিত হাল-আমলের সংকলনগুলোয় তাই "পোস্টমডার্ন ব্রূহাহায়" অন্তর্ভূক্তদের পাওয়া যাবে না। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় থেকে উদ্ভূত জবরদখল প্রজন্ম, পাওয়া আর পাইয়ে দেওয়ার যে প্রগতিলুট চালু করেছিল সেই মডার্নিস্ট কেরামতি থেকে পশ্চিমবাংলার ছাড়ান্ পাবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উনিশ শতকের রেনেসঁসের তাবৎ প্রাপ্তিকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এই নববর্গির দল। অমন ধ্বংস প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার জন্যে ছোট-ছোট 'ব্রূহাহাই' এখন একমাত্র উপায়।






 ↖↭⇮↜⇲↭পাওয়ারস্প্লিন্টার্স⇗↝↡⇜↠↻

রবীন্দ্র গুহ :
বিছানায় কদমকলি উরোজে গোরীনিতম্বে খোঁচ খুনখার, সারারাত সাঁতরেছে
বুনো মোষ খাঁকার দিয়ে মুচরেছে ফুলরূপীর পুঁথিপাতা সাধ উদ্দীপনা
ঝোলাঝুলি নিয়ে আসে ফজল ফকির
উদরের চাম টিপে দ্যাখে জলশূন্যতা চটা বুক উরোজের বাদামী তিলটি উধাও

গৌতম দাশগুপ্ত :
উপমার মাখনে দন্তহীন খারিবাউলি সাংসদের
মাঢ়ীর ব্যবহার দেখে বাহবা দেয় মাজন কোম্পানী
যার প্রাচীন পুরুষ প্রিন্স অব ওয়েলসের জং কামড়ে শয়ান লক্ষ প্রহর
তার মাথায় কলমীর দামের চাঁদোয়া
বুকের ম্যালে পর্যটক জেলিফিস গুণে যাচ্ছে না মাজা ফক্ফকে শাদা দাঁত

অরূপ চৌধুরী :
নিষিদ্ধ দেয়াল কথা পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে
ভেঙে তো দিয়েছি সব তারো বেশি
কথা দিয়ে চিঁড়ে না ভিজিয়ে একদিন গলাবিষে
নেমে গিয়ে মধ্যমার হারানো আংটি
আর স্বপ্নের হারপুন নিয়ে উঠে এসেছি ডাঙায়
তখন এপ্রিল বাজছে কর্নেটে
আর কুহু এভিনিউ
পার্লার থেকে বেরিয়ে আসছে আইসক্রিম শিশুজগৎ

দীপঙ্কর দত্ত :
হুকুম, সারকামস্ট্যানশল এভিডেন্স কিছু নেই। সোডিয়াম আলোয় ডার্ক গ্রীন ওপেল অ্যাসট্রা
ব্ল্যাক সিয়েলো ভ্রম হয় কি না তা তর্ক সাপেক্ষ।  এ মুহুর্তে ডিফ অ্যান্ড ডাম্ব আমাদের ইকলওতা
উইটনেস আঙুলের নাচন বলছে কুতিয়ারা সংখ্যায় তিন; লেগি কোরিয়গ্রাফারটি ভেতরে
আড়মোড়া টোকো হাই তুলছে ধানুকি, বনেটে বাকি দুই চ্যাটের ডিজাইনার হুররা স্লেজ এলো
কোটরে থবু সাপ দেখে চড়ুয়ের কীলকার ঝরে পড়ে ঝাপটা বর্ফিলা

রবীন্দ্র গুহ :
বিজ্ঞাপন-ঘাতিনী মেয়েটি ঝুলসা রোদ্দুরে পুড়তে পুড়তে দেখে
হাতির সঙ্গে যোনিযুদ্ধ চালাচ্ছে ঘিন্নি অস্থিসাপ
সঁপেরা ফ্রডিউলেন্ট মসীহস্তি, অমুক অমুক অমুকের মত
ইয়্যুঁ ঝুকা ইয়্যুঁ উছলা, ছানবিন হু-হু ধুম - বাপস্ ই ভি কোই তরিকা ?
মাথার তালু গরম, খোঁজে শুক্রজল, পশ্চিমের বাতাস বদলে দেয় শ্যামশ্রীর ফজিল ওভেনটপ্স

গৌতম দাশগুপ্ত :
আর্তনাদে আহ্লাদে ঘোড়ার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে
সেই লেলিহান আগুনে সে দেখতে পায়
অ্যাফ্রোদিতির বিশাল যোনিগহ্বর জুড়ে আণবিক মেঘ
আর শান্তিকামী বাচ্চার ছিন্নমুণ্ড সজ্জিত প্যারাম্বুলেটর

অরূপ চৌধুরী :
অ্যাবাকাস থেকে কী-বোর্ড পর্যন্ত এসেছি
দিনের গ্যাঞ্জাম থেকে রাত্রির প্রসূতিসদনে
ভাঙতে ভাঙতে যা খুশি এখন খুব প্রসবউন্মন
একটা ধুলোকণা ছুটে যাচ্ছে মহাবিশ্বের ধুলোকণার দিকে
একটা আঁচড়ে ফুটে উঠছে মনীষার মুখ
সেই মুখ সমস্ত বিকেল আর অস্ত সন্ধ্যায়
যাকে খুঁজে ঘামজব্দ লালজ্যামে মবিল শহরে
তারই মুখ তারই চুল নিখুঁত ক্লোজাপ শটে শব্দ ভাঙছে রাত্রি বারোটায়

দীপঙ্কর দত্ত :
রেড রোজেদের ডিনার হলো না।  ক্যান্ডললাইট ফাকিং চাখছি সিরিঞ্জের ঊনহনচাশ ক্রেজি
বায়ু বুলবুলার অ্যানজাইনায়।  পিছওয়াড়ার পাথুরে মাটি ও মহতরমার ভালভ ও ভালভার
ডুয়াল পিরানহা ছিটকে ফেলছে ফাওরা আর পেভ ম্যানিউভারে চরখি চক্কোত্তি হর্নি ভ্যান
ফেটে বেরিয়ে পড়ছে কদাকার কুত্তা খাকিরা। হ্যান্ডকাফের ছিকলিতে কোপ মারে একটা
কুড়োল এগুচ্ছে না রেবতী বৈধৃতি রাত্রি ছয়টা আঠেরো। পাঁচিলের ওপারে লাফিয়ে পড়লে
হাউন্ডের ঔঃ ঘেউয়ানি সার্চলাইট ভোর জ্ঞানে হরপ্পার শকুন নেমে আসে তৃতীয়ার একোদ্দিষ্ট
নখরের চিরফাড় সপিণ্ডন তীক্ষ্ণ সন্ত্রাস।  

রবীন্দ্র গুহ :
প্রায় ঝুটমুট চুক্কি দৌড় মারে আহির বালক - হাইওয়ে দাপিয়ে ছোটে
বহেল-বুগ্গী নয় তেলফুলের গাড়ি - তেজোমান পুরুষের পাশে
গলা অব্দি ডুবিয়ে সুখে মাংসল রাঁড়ী
সারারাত দুঃস্বপ্নে কেটেছে, র্র্যঁদায় কেটেছে সহেলীর হাতপা আউলেছে চুল
যা এখন পুড়ছে তন্দুরে
ছন্দহীন বাঁকা মেরুদন্ড জঙ্ঘা ও জানু সোনালী সিংহের মুখে দাঁড়িয়েছিল জেসিকালাল
ছিন্নমস্তার বুক ছ্যাঁদা - হুইস্কি শেষ শুধু গোঙানি -
খালসাপাড়া জ্বলছে, কাঁচুলি জামা দাঁতে কাটছে কনফার্মড ভাড়ুয়া
হরিয়ানার বর্ডারে জল বিলোচ্ছে বহেগুরু, খেইহারা ইনশাআল্লা ফকির

গৌতম দাশগুপ্ত :
পাইপলাইনের রসায়নের ভালোবাসা এই জলকে যখন ছুঁয়ে দেয় বেরিয়ে আসে ম্যাকিনটস
ভেলায় শুয়ে ওকে চুষতে চুষতে দেখি
নেপচুনের পিছনে ষাঁড়ের মতো ধাবমান স্যাটার্ন
দাম্ভিক শহরের উপর বর্ষশেষের অভিমানে ভেঙে পড়া টাইফুন

অরূপ চৌধুরী :
পেরিয়ে যাচ্ছি পোড়া আধপোড়া খেত আর লাশ
আর অ্যালুমিনিয়ামের বিষণ্ন ডেব্রিজ
আজ চরকি কাল দাদরী
একটা ভয় সারাদিন আলপথে, মৌজা মৌজায়
উড়ো খবর উড়ে বেড়াচ্ছে হাওয়ায়
মৃত্যুর কৈফিয়ৎ চেয়ে একদল অসুখী আত্মা আজ নাকি বায়বপিশাচ
তাদের বিদেহী গন্ধে ভারী চরাচর
ঝলসানো গর্ভকেশর থেকে ভেসে আসে বিমর্ষ ফিসফাস
চামড়া টানছি কোনো যন্ত্রণা নেই ধ্বকধ্বক নেই
শুধু গলার নালী চিরতে চিরতে নেমে যাচ্ছে বিষের কালো রেখা

দীপঙ্কর দত্ত :
ন্যাপকিন সিরিঞ্জ কনডোম যা কিছু ডিস্পোসেবল মেঘ মহেরবান জল ও ইল্লোতের পাঞ্চ সুরুয়া
আহাহা দে চাবুক দে চাবুক ছ্যাঁচা মাংসের ডোরা চিমটার ধুঁদুল উল্কি বরং খুলে থো বুশ শার্ট
রাত্রি ১টায় কর্কট লগ্নে পুনঃ যযুর্বিবাহ শাড়িকে লেত্তির মতো হ্যাঁচকা হ্যাঁচকা ডাইন ব্যালেরিনা
তীব্র লাখ পাক দ্যুতির ফিনকি চোখে মুখে দেওয়ালে ক্যানভাসে

রবীন্দ্র গুহ :
জীবনের কোন অংশই ছাতার নিচে নয়, জলফাটলে পা
চোখের সামনে কাঁধ শিরদাঁড়া টেরিতিরচি সপাট পা-ইস্তক
শিকড়-বাকড় নয় শিকল চাই শিকল পলতের মত পাকখাওয়া
মারুক ঢিলাক, শিকল ছাড়া গত্যন্তর নেই হোং-রীং হোং-রীং-রীং
শিকল টানো হৃদ মাংস ছিঁড়ে খাই শূন্যে লাফিয়ে
ঘর নেই বিছানা নেই দোয়াতকলম নেই শুধু শিকলের শব্দ-শৈত্য
                                   আর অশথ শ্মশানের হাঃ-শব্দ
পুঁথির বাইরে পৃথিবী নেই ফি-হপ্তার এই অসহ্য ধিনাপন মুচড়ায় শিকল
রয়েছি দূরত্বে বসা পোষা বিধর্মী বীর্যখশবু মাখানো শব্দহ্যায়বান
                পঞ্চবাহু ঊরু নাভি দুই প্রস্থ সানু জানু ফারাক ফারাক  

গৌতম দাশগুপ্ত :
পি.এম.-এর সাতান্ন নম্বর প্লেটুনে বারুদের মধ্যে সুজির মতন ঘুরে বেড়াই
মাঝে মধ্যে ডালে ফোড়ন পড়ার মতন ছ্যাঁক ছোঁক আওয়াজ ওঠে শহরের পাঁচমিশেলি ভিয়েন-এ

অরূপ চৌধুরী :
আসলে পদ্ধতি বলে কিছু হতে দিতে নেই
যদি হয় তাহলে সেই লাথি খাঁচার শিক বেঁকিয়ে আরও ফাঁকায় ডানা ছুঁড়ে দেওয়া
নীল তো সবসময় তৈরি সবুজ তো কতদিনের হাপিত্যেশী বন্ধু
সেঁধিয়ে যাওয়ার নামই মরে যাওয়া বেরিয়ে আসার নামই বেঁচে ওঠা
বাঁশি থেকে স্যাক্সোফোন বিটলস প্রবাহ থেকে র্র্যাপজ্যাপ
বিকল্পের বিকল্প খোঁজে ধ্বনি আজ শব্দ গান আজ এতদূর এসেছে -

দীপঙ্কর দত্ত :
ঘরটা বদলান। পেট্রলিং চৌরাহা অব্দি থেমে যাচ্ছে অবশ্যই। চার রুটি পেঁয়াজ তরকার খোরা নিয়ে টঙে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন আটটায় কিন্তু বারোটায় ফের চিরুনি ঢুঁড়ছে বেয়নেটে পাক খাওয়া কোঠেওয়ালির আগুন পেটিকোট। তেতলার জানলা থেকে অগলা দোতলা ছাতের দূরত্ব ফার্লং দশেক।  বুড়ি খানকিদের শাড়িগুলো এমন পচা যে রেলিংয়ে বেঁধে ঝুলে পড়লে ছিঁড়ে পড়ে যাবার হেব্বি ভয়। বরং সিঁড়ির গোড়ায় এক্স-রেটেড ভাদ্দুরে স্কুবিডু লটকে দিন কাহারের ব্লুটুথ কামড়ে। ব্যানানা ফ্লেভার্ড কন্ডোমগুলির কতটা ফুডভ্যালু জানি না ; গিঁট মেরে রাখবেন কেননা হাওয়া এখন এতটাই গরম তারা ফেঁপে ফেঁপে উঠতে পারে হার্ট শেপড্ লিটল গুব্বারা। আর তখনি কয়ামৎ।  বচাকুচা কার্তুজের ঘুমতা বলশয় তোর ওর ব্যারেলে ব্যারেলে। মওসীজী আহো, নমকিন জোঁকরক্তের এক-এক কাৎরার তরস দ্যাখো নাকাবন্দ প্যায়াসা খটমলে।  

রবীন্দ্র গুহ :
শরীরের গভীরে এখন বরখিলা পথ
আর ঘুরপাক খাওয়া হাড়গুলো থ্যাঁথ্লানো আর আঁশ ছাড়ানো বুকে কুচো পাথর
এ-হে-হে, ব্যাস্ত হবেন না, ট্রাউজার্সটা বেখাপ্পা হলেও শতাব্দীর সেরা রূপবান
মাংসের ঝোলে ডোবানো কিডনির গরম গন্ধ আড্ডার গোলঘরে, আর আটপাশ
গোল থুৎনি-ছুঁয়ে আঁচিলের ওপরকার লোমের আঘ্রাণ
আত্মার ভেতর ফ্যানভাতে লেজ নাড়ে ভুকমর কুকুর
রোদ্দুরথন বাইরইয়া কোনদিকে যাবা ? পুবের মেঝেতে থমকানো নদী আর
দক্ষিণে শিশু হামা দেয় ভৌতিক ভঙ্গিতে  

গৌতম দাশগুপ্ত :
বাঙ্গুর থেকে সুদূর সুতারকিন স্ট্রিট
সাহিত্যগুণমণি পুরস্কারের বায়োচার্টে ফুটে ওঠে
পঞ্চম বিবাহ সপ্তম বন্ধুনাশ পুনর্বিবাহ আর
কিশোরী কবি মর্দনের এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাকটিভিটি
সেই শোকে পঞ্চাশের জরদগব কবিকুল
পেপসী ও কোকের মাজরায় লাটাই ধরে খোলে
মাইল খানেক ধেরেঙ্গা লম্বা না হয়ে ওঠার হিস্ট্রিশিট

অরূপ চৌধুরী :
যে আগুন একবার ঘর ছেড়ে পথে সে আর ঘরে ফিরবে না
গিলে খাবে বিকারগ্রস্ত চ্যানেল ঊরুর মাখন প্রমোটারের ব্লুপ্রিন্ট
বড় ভুল একটা জায়গায় নেমে এসেছে দমনহাত
আমি বলছি না এক্ষুনি ভেঙে পড়বে মুখোশের আঁতাত ও জয়জয়কার
তবে ভাঙ্গন যে একটা হবেই এটা বলছি
বলছি যে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ভেতর থেকেই উঠে আসে
লৌকিকের প্রতিশোধ ও তার বিষথাবা

দীপঙ্কর দত্ত :
যে ফেরার কার্তুজগুলি রিভলবারের খোঁজে এসে দু'রাত হল্ট করে গেছে
তাদের সক্সের উৎকট বারুদ গন্ধের ব্যাপ্তি এই ফিল্ড
স্লিপে কেড্স গালি একটু কার্ভ হয়ে রুকস্যাক
আর ফাইনলেগ ডীপ থেকে মৃত ডাহুকগুলির ওপর দিয়ে গড়াতে গড়াতে
ক্রিজের গা ঘেঁসে দাঁড়ায় খনিজ জলের এক ঠান্ডা বাস্পময় বোতল

রবীন্দ্র গুহ :
চলুক জিভ বদল মাত্রাহীন আইবুড়ো আচার
চোরাশিকারীর মতো জঙ্ঘাসিঁড়ি ভাঙা নাচকোষ থেকে
আসা ই-মেল পেটতক ক্যামেরার ছবিতে আলগা শরীর
চমকায় পাতাল ছ্যাঁৎ শিলায়
আমি অহংকার বাদুড়ব্যস্ত ভূতসোনা স্তনভাসানো ছুঁইমুই
পরীদের ভরাতুরা ভিড়ে, চুঁইয়ে চুঁইয়ে বীর্য ঝরে শস্যদানা
আমার পিনকোড নেই শোকার্ত শুনশান উলঙ্গ টেরাকোটা বুক চালকলা ছেতরানো
হাড়গুঁড়ো করা তেজ ধামসা প্রত্নছায়া
কোমরে ঘুঙুরিত নানাক্কার হাওয়া, আর কাঁটাফুল ৬০ সেকেন্ড
বাদে আদালত ঘরে নয় জলপুলের ওপর ধাক্কা মারে
দুপুরের হাওয়া শব্দ হয়ে ঝুলে থাকা নিজের গায়ের চামড়ার দাগ
নিজেই চিনি না, ওদিকে জামা মসজিদ ঘিরে বিদ্যুৎবেড়ায় কাঁপে
লতানো পাতা ম্যাজেন্টা রঙ যেখানে বিজয়স্তম্ভ ইন্ডিয়াগেট সেখানে টাটুবাজার ছিল,
চারপাশে রক্তভেজা ভুরু অজস্র জনমুনিষ্যি নার্ভাস মেয়ে কনোসটেবল যোনিলোমহীন

গৌতম দাশগুপ্ত :
মাইগ্রেট করে আসা বন্যার পিছনে
রমনানন্দের দীর্ঘ লেখ বেয়ে দৌড়য় নদীয়া ঢেঁকুর
হামা দেয় ভেজা বৈষ্ণবী বলাৎকার
আমি মুখে পেটিকোট বেঁধে একবার পাপ্পু যাদব
আবার বীরপ্পনের দরজায়
শেষে বেগুসরাই সেশন জাজের রুল আর ইঙ্কে রক্তাক্ত গোঙাই
আপনিই চন্ডালিকার আনন্দ
গিভ মি মোর
গিভ মি মোর ...

অরূপ চৌধুরী :
যেখানেই আঙুল যাচ্ছে চুলের গোড়া রোমকূপ
মায় হাত ও পায়ের আঙুল, গজিয়ে উঠছে ফুটো
আর বেওয়ারিশ পোকা
আরও কত লিখবো পোকাদের কেচ্ছাকাহিনী
এই তো গত পরশু পেট খসিয়ে সতী হলেন এক পোকা
আর জেল থেকে বেকসুর ফিরে এলেন এক তছরুপকারী
আরও কত লিখবো পোকাদের কেলোর কীর্তি
যতো লিখি দেখি চোখের ভেতর থেকে
কানের গর্ত ঠেলে ঠেলে বেরিয়ে আসছে সেই পোকাই
পেচ্ছাব করে দিচ্ছি পোকাই কমোড-ভর্তি সেই কিলবিল

দীপঙ্কর দত্ত :
জংলি কুকুরের মতো শুঁকতে শুঁকতে দুই ওয়ার্ডবয় যখন এখানে হাজির হয়, ফাউলার শকুন ডানায়
তাদের আগলায়, ড্রিংক অফার করে, খরগোসের মাংস। রহ্যান দো সাহব, মারে লিয়ে ইয়ে সব
হারাম হ্যায়। আব্বে উঠ শালে, রাস্তেমে লাশোঁকা ঢের লগ্ গয়া, চল্-উঠ-ভাগকে। টানা হ্যাঁচোড় ট্রেল
স্ট্রেচারের।  টিলার ঝুরো পাথরগুলি রিসিড ফেউ নেয়। খাইয়ের ধার ঘেঁসে আলো ফেলতে ফেলতে
টেনিস কোর্টের পাম ও পাইনের স্মৃতি থেকে উড্ডীন মথ নেমে আসে ওর কুপি হেডলাইট -

গৌতম দাশগুপ্ত :
ব্যাটেলশিপ পটেমকিনের শিশুগাড়ির মতো
ক্যামেরায় পিছলোয় না হিউয়েন সাঙ ওল্ড মঙ্ক আর তৈমুরী খেজুর
ফুল্লরার বারমাস্যা খোল নাড়ায় বেরিয়ে আসে রিতু বেরী সামার কালেক্শন
কারাকোরাম বাইপাসে কাহ্নপার তুলট
বেরিয়ে আসে হিটলারের অ্যালার্জিক রুমাল গান্ধীর ননভায়োলেন্ট কাম
পায়রার তলপেট ভুলে বুলেট চলে যায় বোরখার ভেতর

অরূপ চৌধুরী :
আছে নেই এই তর্কের বাইরে চেতনাকে ধরে চাবকাচ্ছি আর খেয়োখেয়িকেও নাশ মারছি দাঁতে
কামড়ে কামড়ে উঠে যাচ্ছি যে রকম কুয়াশার রহস্য ভেদিয়ে কামরাঙা বালার্ক আর গোধূলির
ঠিশারা মাড়িয়ে তিসরিকসমের গো-যান এক রাত্তিরের যাত্রাপালা থেকে উঠে যায় আরেক রাতের
নুমাইশী নওটঙ্কিতে -

দীপঙ্কর দত্ত :
ছাইরঙা আই মিন ইস্পাহানকে পটান, চার পায়ের ক্ষয়াটে নালগুলোকে বদলে দিন,
কেনো না একমাত্র ওই জানে খণ্ডহর হাতায় খানকিচ্ছেলেদের চুলাচাক্কিতক পৌঁছনোর চোরা পথ।
ইন্সপায়ার্ড বাই দা স্কুল অব আমস্টার্ডাম ব্রথেল পিরিয়ড অব ইন্টেরিয়র ডিজাইন আই হ্যাড স্ট্রাং
রেড হার্ট শেপড্ ফেয়ারি লাইটস্ অ্যারাউন্ড অ্যালিক্স বেডরুম মিরর। না ফেরা অব্দি আপনার শাগির্দ
তোফা থাকবে যান এই আলোর জিম্মায় -

গৌতম দাশগুপ্ত :
জিলেটের ওয়াকওভার দেখিয়ে গালে ব্লেড মারানো
হই হুঙ্কার দিয়ে মাখনের মেজ জ্যাঠামশাই
কড়া নাড়া হাত মারা আঠা লাগানো খোলো প্রৌঢ় শিক্ষা স্কুল
আইআইটি   আইটিআই-এর মাঝখানে জপসিদ্ধ পার্লামেন্টারিয়ান বেবুন
মাতাহারীর বকলস্ খুলে ঢুকে পড়েন কপিলমুনি

অরূপ চৌধুরী :
ঘড়ি দেখবো না, তোমার মুখ দেখবো না,
শুধু জল খাবো, ঘন ঘন সিগেরেট খাবো
পোড়া জিভ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভালোবাসবো ঠোঁটের ফোস্কা ও ভাঙা দাঁত
আর গান শুনবো মশাদের, আধপেটা চাঁদের নিচে
লাপাতা মরদের জন্য করুণ ও দীর্ঘায়ত কান্না শুনবো কুকুরীর

দীপঙ্কর দত্ত :
সেন্ট লরেন্ট, ইন টার্মস অব কাট, সিল্যুট, ইনোভেশন, কালার অ্যান্ড সেন্স অব হিউমার,
আমরা ভেবেছিলাম তুমিই শেষ কথা !
আমাদের ওক ও পাইন গাছড়ার ফল্-উইন্টার কালেক্শন থেকে একেকটি ঢাউস ম্যাকিনটস
হিউজ কলারে ডেকলেট ট্রেঞ্চ এসে ভাংরা ঘিরছে পুতুল ও নাচিয়েদের দৌকালীন নগ্নতা
আমরা রিৎসু শুনছি কাৎসুমাতা
বো স্ট্রোকে ক্লাসিক্যাল ব্লুজ জিপসী আর মেটালের কালসাপেদের লুডোকোর্ট উড়ে আসছে গ্যারাজ চাতালে
ঘুঁটি ও ছক্কার খোঁজে বায়ুকোণ শেষবার খেদিয়ে ছাড়ি ঘুম চোখ বিষণ্ন সাইকেল

গৌতম দাশগুপ্ত :
নিয়তির মত এক লাটাই জলের ভিতর ফসফরাস হয়ে হাওয়ায় অদৃশ্য নিয়ামক হয়ে
আমাকে সমস্ত মেহফিল সমস্ত বিশ্রাম সমস্ত ঘুম ভাঙিয়ে
তুলে আনে বুক টনটন সুতোর তাগিদে
আধো ঘুম আধো জাগার ঘোরে লাটাই ডাকে আয়
বুকের ফুটো দিয়ে ভাতের মাড় ও কাঁচের গুঁড়োর সঙ্গে ঝরে পড়ে
গাদি খেলার ধুলো আর বিটুদির রক্ত চোষা ঠোঁট
ব্রীজের নির্জনে প্রথম হস্তমৈথুন আর জলের আকাল
সন্তোষের মধ্যে পুষে রাখা অসন্তোষ
বোধোদয়ের মলাটের আড়ালে ফুঁসে ওঠা জন্মের স্বৈরাচার

অরূপ চৌধুরী :
কিউঁকি কিসমে কিতনা হ্যায় দম্ যেরকম আমাদের জানা হয়ে যাচ্ছে
সর্ষের ভেতর ভূতেদের গোপন আস্তানাও আর গোপন থাকছে না ফলে
ইঁদুর সঙ্ঘের একশো মিটারে নামপত্র জমা দেবার বদলে ব্যক্তিগত
সাউন্ড ট্র্যাকে আমরা তুলে রাখছি ডাডাবাদী ঘোড়াদের ডাক আর
রক্তসূত্রের জাতীয়তা ভেঙে দুমুখ খোলা এক বিশ্বপুরাণ হাই হাচ্ মেল করছি
আমার সাইবারপন্থী ও প্লুরালিস্ট বন্ধুদের ডেরায়

দীপঙ্কর দত্ত :
এপিথেলিয়ামে আলো-কণা জরো উজেনেসিসে নিটোল সূর্য টিউব বাহিত হয়ে আসে
আর তাকে নিষেক দেয় ঝড়ের সিম্ফনি
ঘনিয়ে উঠছে ঝড়ের সিম্ফনি
সসারের ডফলী থেকে
ঘনিয়ে উঠছে ঝড়ের থার্ড সিম্ফনি
আর জাইগোট ফর্ম নিচ্ছে এক কাউন্টার কর্ড
যা আষ্টেপৃষ্ঠে পাক খেয়ে বিপরীত ক্রমে ঘুরিয়ে ছাড়ছে ওই বিকট তীব্র লাটিম

গৌতম দাশগুপ্ত :
আমি বলতে পারি না যখন তিউনিশিয়ার বালিয়াড়িতে সে রোমেল নেশায় ধাবমান
ফ্রেঞ্চ রেসিস্টেনসের নেত্রী অ্যানকে ছিঁড়ে খাচ্ছে দুটো জর্মন গ্রে হাউন্ড
আমি তাকে বলতে পারি না সেই জাপানী দম্পতির কথা
যাদের রমণের মাঝখানে নেমে এসেছিল অ্যাটমবোম

অরূপ চৌধুরী :
বেলাভূমে সতীবিদায়ের মদহোশ র্র্যাম্প-শো গুলোতে কোড ভাঙার যে সব দাবানল ছিলো
নদীজলেও লাগুক তার টঙ্কার হ্যাট্স-অফ ডিক্সি চিক্স তোমাগোর কান্ট্রিব্লুজ গুলারে আমাগোর
দ্যাদার ছালাম গানবাহানার ছলে বুশব্যারনের রাঙা গালে কশাইছো যে সব থাপ্পড় তাদের
এক একটা ঝঙ্কার ও বিট্স খুলে ধরতে গিয়ে দেখি তাতে লেগে থাকছে যুদ্ধবিরোধের
মারহাব্বা হাওয়া আর তার ভেতর উড়ে বেড়াচ্ছে লিবারেশনের গুপ্ত বীজ সেই বীজ যা ছোঁয়াচে
ও আগ্রাসী নিরন্তর নতুনান্তিকের ছন্দলোপাট ভাষাগর্জনে যা আজ উগড়ে দিচ্ছে পোস্টকলোনিয়াল
আত্মাদের চাড়াল গোঙানী তুমুলের স্বেচ্ছাচারে অই অই খেলা ছেড়ে ফিরে যাচ্ছে শব্দ জব্দ কবিতার
নির্বিষ ছক

দীপঙ্কর দত্ত :

এখানে হৃৎডিপ পৌর্ণমাস চন্দ্রবোড়া বিষের মতো জেল্লাবান আদুর মুহব্বৎওয়ালা কাজরা। ফলে পাহাড়
ব্যাকড্রপে যে টেন্টচাষ, ছপ্পর উজালো, রট আয়রন টেবলে জলসমুন্দুর ও বিষের মধ্যবর্তী এক ধাপ
ফিকে নীল রঙা চাদ্দর ডেনিম গড়ালো এটিলা ওটিলা।  ডাঙায় পাটাতন গিরলে তাজঝিন বিয়ার ঢালার
মতো সন্তর্পন ১৬০ ডিগ্রি রম্ ঢালে তাজঝুমদের পেট-ডাগরা গ্লাসে গেলাসে। অথচ গাউনের জাফরি
কাপাস আলফাজ দুহাতে আলতো রুখে তুলে সম্রাজ্ঞীর মতো যে নেমে এলো সে তানোম। তেরেনোম
লোন অ্যালোন কনভিকটেড অফ শপ লিফটিং ফ্রম আ বীভারলি হিলস স্টোর নেমে একটু পিছিয়ে
পড়তে চাইছেন

গৌতম দাশগুপ্ত :
আজ ঝুগ্গি ধোবার দিন
হোসপাইপের তীব্রতায় কাপড় তুলে দৌড়য় চৌপাট্টির বেশ্যা
বোম্বে ভি-টির দালাল দাদরের হাফ নেতা
ধোয়া জলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে ছেঁড়া আমেরিকান নাইটি
থ্যাঁৎলানো স্প্যানিশ বেলুন আর পুরুষাঙ্গে খাওয়া ছবেলীরানীর বিপর্যস্ত হাসি

অরূপ চৌধুরী :
এক কঙ্কাল কবিতার পাশে আরও ধারালো করে আনি
আমার একরোখ সহবাস
হজম করি হাড় ও তন্তুর ক্ষয়
তার চোপসানো স্তনে মুখ রাখতে গিয়ে মনে পড়ে
প্রলেক্টিন ক্ষরণ নেই কতকাল ব্লাউজও ভেজে না
শুধু মাস গেলে ফের সেই রক্তপাত ও পরবর্তী শোক পালন
আমাকে ছুটিয়ে মারে
আর আমি বাজার ব্রহ্মাণ্ড ঘেঁটে তুলে আনি প্লাজমা ও প্রোটিন
তুলে আনি স্নেহ ও শর্করা
নাছোড় ইয়ার্কি দিয়ে ফুটিয়ে তুলি কঙ্কালের হাসি

দীপঙ্কর দত্ত :
ও ফুফি তোমার তো কপাল পুড়লো গো ! আয়ানের আব্বারে কও বিবিরে জলবিছুটির হাম্পু দিবো শোগায়। মেঘহৃদ থেকে প্রেম এই সোঁদাল ঘুম তাড়ানিয়া বওছাড় হলো ডেথেদের ভ্যালী ও ভিলায়। তারপর যে রদ্রু উঠলো চোখ মটকে ঘুমের ভান আমাদের সোহাগচাঁদ দ্যাখে টুপিহীন শ্মশ্রুহীন মুন্ডিত গেরিলা চে নাচছে খৃষ্ণ খনশাস। তাবৎ স্ট্রিট ফাইটাররা খণ্ডহরের ঝুরো ইঁট সে ইঁট বেজে উঠছে হাপুস কীর্তনীয়া।




যোগাযোগ :
09891628652
deepankar_dutta@yahoo.co.in
facebook.com/shunyakaal.webzine